নতুন ধারার ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ করতে দেশি-বিদেশি ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) সংস্থা, রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী, ওষুধ কোম্পানির মতো দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি আবেদন করেছে। লাইসেন্স পেতে প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে, আবার যৌথভাবেও আবেদন করেছে। এসব আবেদনের যাচাই-বাছাই চলছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক যুগান্তরকে বলেন, গত জুনের শেষের দিকে ডিজিটাল ব্যাংকের ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়। এ পোর্টালে নির্ধারিত সময়ে ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। নীতিমালা অনুযায়ী-শর্ত মেনে যারা আবেদন করেছে এবং যেগুলো যোগ্য হবে লাইসেন্সের জন্য তাদের এলওআই (লেটার অব ইন্টেন্ট) দেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, এলওআই পেতে পরবর্তী বোর্ড সভায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম উঠতে পারে।
১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর অনুমোদন দেয়। পরদিন এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য অনলাইনে আবেদন ওয়েব পোর্টাল চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারবেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী এ ব্যাংক চলবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের জোগান দিতে হবে। ঋণখেলাপি কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত কোনো মামলা থাকলে তারা আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
জানা গেছে, দেশের বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক মিলে ডিজিটাল ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে-‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’। এ জন্য সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক জোট বা কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায়। ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’, ‘নগদ’ ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক, রাইড শেয়ারিং পাঠাও। বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম যুগান্তরকে জানান, যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করেছে বিকাশ। ডিজিটাল ব্যাংক পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী। নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল যুগান্তরকে বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনা করতে প্রস্তুত ‘নগদ’। লাইসেন্স পেলে গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা থাকায় নগদের শক্তিশালী এজেন্ট পয়েন্টগুলো সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।
ডিজিটাল ব্যাংক প্রসঙ্গে এক বার্তায় বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, ১৭ কোটি ৩ লাখ মানুষের দেশ বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার পরিসর সীমিত। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য বাংলালিংক প্রস্তুত। দক্ষতা ও সক্ষমতা কাজে লাগানো হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..