×
সদ্য প্রাপ্ত:
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-২১
  • ৫৯ বার পঠিত
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনালের ইমিগ্রেশনেও ই-গেট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অথচ এর আগে পুরোনো টার্মিনালে বসানো ই-গেটগুলোর সবই অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া বাংলাদেশ ই-গেট ব্যবহার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ এখনো পায়নি। ফলে ভবিষ্যতে ইমিগ্রেশনে ই-গেট ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।

সূত্র জানায়, থার্ড টার্মিনালে ই-গেট বসাতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, ‘টার্মিনাল-৩-এর নির্মাণকাজ অতি দ্রুতগতিতে চলছে। সেখানে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরুর আগে ই-গেটসহ স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল সিস্টেম স্থাপন করা প্রয়োজন। এজন্য ই-গেট স্থাপন ও অন্যসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি দক্ষ ও উচ্চ কারিগরি কমিটি গঠন করা জরুরি।’

সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের আওতায় দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে ই-গেট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মানির ভেরিডোজ কোম্পানি কয়েক দফায় ৫০টি ই-গেট সরবরাহ করে। এর মধ্যে তিনটি বিমান ও দুটি স্থলবন্দরে ৪৪টি ই-গেট বসানো হয়। বাকি ছয়টি বসানো হয়নি। এছাড়া ই-গেট পরিচালনার জন্য ৪০ জনের জনবলের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা অনুমোদন পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, থার্ড টার্মিনালে ৬২টি ই-গেট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে শতকোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে। একেকটি ই-গেট কিনতে কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। কারণ দুই বছর আগে প্রতি ইউনিট ই-গেট কিনতে কোটি টাকা খরচ হয়। এখন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দাম আরও বেশি পড়বে। এছাড়া ই-গেট রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৮টি এবং বেনাপোল ও বাংলাবান্দা স্থলবন্দরে ছয়টি ই-গেট বসানো হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় এর সুফল মেলেনি। যাত্রীদের অনেকে ব্যক্তিগত উৎসাহ থেকে বন্দরে পড়ে থাকা ই-গেট ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় কেউ ই-গেটে ঢুকলে উলটো তাকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। পরে আবার পাসপোর্টে সিল মারার জন্য পুলিশের কাউন্টারে দাঁড়াতে হয়।

শোপিস : ৭ আগস্ট বিকালে সরেজমিন বিমানবন্দরে দেখা যায়, দুই নম্বর বহির্গমন গেটে বসানো কয়েকটি ই-গেটে নীল আলো জ্বলছে। পাশেই বড় টিভি পর্দায় প্রচার করা হচ্ছে নানাবিধ সুবিধার কথা। কিন্তু কাউকে ই-গেট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। যথারীতি ইমিগ্রেশন কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন যাত্রীরা। পাসপোর্ট ও ভিসা পরীক্ষার পর নানাবিধ প্রশ্ন করছে পুলিশ। সন্তুষ্ট হলে পাসপোর্টে বহির্গমন সিল দেওয়া হচ্ছে।

দেখা যায়, মাঝেমধ্যে ২-১ জন যাত্রী ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে ই-গেট দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মেশিন থেকে বের হলে তাকে ফের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। যারা ই-গেট দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের নানাবিধ প্রশ্ন করছে পুলিশ। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ই-গেট এখনো অফিসিয়ালি চালু হয়নি। বলতে পারেন ‘শোপিস’। এছাড়া ই-গেট দিয়ে পার হলেও কোনো লাভ নেই। পাসপোর্টে সিল মারার জন্য আবার ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যেতেই হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানাবিধ জটিলতায় অদূর ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে ই-গেট কার্যকরের সম্ভাবনা কম। কারণ, ই-গেটের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ এখনো যুক্ত হতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইকাও) সনদ না থাকায় বিদেশি বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহার করতে পারেন না বাংলাদেশিরা। একইভাবে বিদেশিরাও বাংলাদেশে নেমে ই-গেটের সুবিধা নিতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু পুরোনোগুলোই কার্যকর হচ্ছে না, তাই নতুন করে আবার ই-গেট বসানো হলে এ খাতে অহেতুক সরকারি ব্যয়ের বোঝা বাড়বে। এছাড়া পুলিশের সম্পৃক্ততা ছাড়া ইমিগ্রেশনে ই-গেট বাসানো হলেও তা কার্যকর হবে না। তাই নতুন করে থার্ড টার্মিনালে ই-গেট বসানোর আগে এসবির (পুলিশের বিশেষ শাখা) সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

থার্ড টার্মিনালে ই-গেট স্থাপন প্রসঙ্গে জানার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন রোববার যুগান্তরকে জানান, থার্ড টার্মিনালে ই-গেট স্থাপনের প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি অবগত। কিন্তু এটি তার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রকল্প) ফয়সাল আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে যুগান্তরকে তিনি জানান, থার্ড টার্মিনালে ই-গেট বসানো সংক্রান্ত প্রস্তাবটি তার টেবিলে আসেনি। এ সংক্রান্ত ফাইল এলে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর আধুনিকায়ন এবং যাত্রীদের সুবিধার জন্য ই-গেট বসানো প্রয়োজন। কিন্তু আগে স্থাপিত ই-গেটগুলো যেখানে এখনো কার্যকর করা হয়নি, সেখানে নতুন করে এগুলো বসানো হলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বরং এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। তাই জনগণের অর্থ ব্যবহারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়ে যেমন ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়, ই-গেট কেনার ক্ষেত্রেও তেমনটি যেন না হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat