মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শল্যচিকিৎসকরা শূকরের কিডনি মানব শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন। জানা গেছে, রোগীর শরীরে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে কিডনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ উল্লসিত মার্কিন শল্যচিকিৎসকরা। শল্যচিকিৎসকরা বলছেন, জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় অঙ্গের সংকট মোকাবেলার জন্য এটি আশার আলো দেখাচ্ছে।
ব্রেন ডেড বা মস্তিষ্ক মৃত হয়ে যাওয়ার পর একজন মানুষকে আইনত জীবিত বলে ধরা হয় না। কিন্তু তার শরীরকে কিছুটা সময় পর্যন্ত যন্ত্রের সাহায্যে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলেও তার হৃৎপিণ্ড কিছু সময় ধরে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি শরীরের বাইরেও সচল থাকার ক্ষমতা আছে এর।
কিন্তু শরীরে রক্ত এবং অক্সিজেন সচল রাখার জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। ব্রেন ডেড মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং অল্প কিছুদিন ধরে তার শরীর এভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে পরিবার তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চাইলে করতে পারে।
যে রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তার মস্তিষ্ক মৃত বা ব্রেন ডেড অবস্থায় আছে।
এই অবস্থায়ও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে কিডনি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের শল্যচিকিৎসকরা বুধবার জানান, একজন মৃত ব্যক্তির মধ্যে শূকরের কিডনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে, এটি একটি মাইলফলক।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক রবার্ট মন্টগোমারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের জেনেটিক্যালি এডিট করা শূকরের কিডনি মানবদেহে এক মাসেরও বেশি সময় কাজ করছে।’
তিনি বলেন, এই সাফল্য জীবিত রোগীদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের যেকোনো গবেষণার জন্য আরো নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। শূকরের কিডনি জিনগতভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল।
গবেষণায় জিনগতভাবে শূকরের কিডনির এমন পরিবর্তন করা হয়, যেখানে মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে বাধা দেওয়ার সমস্যা দূর করা হয়।
মন্টগোমারি আরো বলেন, ‘আমরা এখন আরো তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা জানতে চাচ্ছি, শুধু এমন জিনই নির্মূল করা যথেষ্ট কি না-যার জন্য ইমিউন সিস্টেম প্রতিস্থাপিত অঙ্গটিকে ধ্বংস করতে পারে। পাশাপাশি ক্লিনিক্যালি অনুমোদিত ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধের সঙ্গে কেমন কাজ করছে। এ ছাড়া মানবদেহে অঙ্গটি প্রতিস্থাপন করার পর দীর্ঘমেয়াদে সর্বোত্তমভাবে কাজ করবে কি না, সেই দিকটি দেখা।’
নতুন গবেষণা নিয়ে বিজ্ঞানীরা জানান, ৫৭ বছর বয়সী এক ব্রেন ডেড রোগীর দেহ হাসপাতালে দান করেছিল তার পরিবার। তাকে নিয়েই এই গবেষণা চালানো হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, প্রতিস্থাপনটি দ্বিতীয় মাসে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জীবিত মানুষকে বাঁচাতে প্রাণীর অঙ্গ ব্যবহারের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট এগিয়ে যাবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য দান করা এই মৃতদেহ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৫৭ বছর বয়সী ওই রোগীর বোন বলেন, ‘আমি লড়াই করছি। আমি মনে করি, আমার ভাই এটাই চাইছেন। তাই আমি আমার ভাইকে গবেষণার কাজে তাদের দিয়েছি। তিনি মেডিক্যাল বইয়ে থাকবেন এবং তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’
সূত্র : আলজাজিরা
এ জাতীয় আরো খবর..