গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ বান্ধব তালগাছ। তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরি হয়। এমনকি তালের কাট দিয়ে বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরি হয়। কিন্তু কালের আবর্তে গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের এ তালগাছ। তালের ফল এবং বীজ দুই-ই বাঙালির জন্য সুস্বাধু খাদ্য। তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, ইত্যাদি তৈরি যায়।
তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদান।
আমাদের দেশের পরিবেশ বান্ধব এই তাল গাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। তাল গাছের পাতার সঙ্গে সুপরিচিত বাবুই পাখির সুনিপুণভাবে তৈরি পাতার সঙ্গে ঝুলানো বাসা (আশ্রয়স্থল) সবার পরিচিত। আজকাল হাজার হাজার পাখির কিচির-মিচির ডাক আর মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে না। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠছে বিরাগভাজন। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়া, আবার অতিবৃষ্টি, কালো মেঘের বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা এতো বেশি যা ভাবিয়ে তুলছে। এ অবস্থায় তাল গাছ রোপণ, হেফাজত ও রক্ষায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষক আব্দুস জলিল ও মানিক বলেন, ‘তাল গাছের সব অংশই মানুষের উপকারে আসে। এ গাছ রোপন করলে বেশি জমি দখল করে না। তাই জমিও নষ্ট হয় না। কোনো সার-ওষুধ ব্যবহার করতে হয় না। কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। রোপন করার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে তাল গাছে ফল ধরে। এ গাছ খুব শক্ত-পোক্ত হওয়ায় ঝড় বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। তবে কৃষকরা দাবি করেন, এ বিষয়ে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা এবং তদারকি থাকলে হয়তো গাছগুলো একটু বেশি করে রোপন করা হতো।’
উপজেলা কৃষি অফিসার ফরহাদ হোসেন জানান, তাল গাছ রোপনের ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করি এবং চারা রোপন করেও কিন্তু আগের তুলনায় একটু কম। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো অর্থ বরাদ্ধ বা কোনো প্রজেক্ট নেই।