ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ না নেওয়ার কারণেই গদি হারিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ায় সফর এবং সফর শেষ করে পাকিস্তানে এসে জনসমাবেশে ইউক্রেন যুদ্ধে 'নিরপেক্ষ' অবস্থানের ঘোষণা-ই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পিটিআই নেতার জন্য। এসব কারণেই অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে সরিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন গণমাধ্যম 'দ্য ইন্টারসেপ্ট' এসব তথ্য দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান।
বৈঠকে ডোনাল্ড লু আসাদ মজিদকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। আসাদ মজিদকে তিনি বলেন, ‘(ইউক্রেন যুদ্ধ) পাকিস্তানের অবস্থান কোনভাবেই আমাদের কাছে নিরপেক্ষ বলে মনে হচ্ছে না।’
বৈঠকে আসাদ মজিদ ডোনাল্ড লুর কাছে জানতে চান, ‘পাকিস্তান ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। এ কারণেই কি যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়া?’ এতে ডোনাল্ড লু নেতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত ইমরান খানের মস্কো সফরের কারণেই হয়েছে।’
ডোনাল্ড লুর এমন হুমকির জবাবে আসাদ মজিদ খান জানতে চান, ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে কেন ওয়াশিংটন ইমরান খানের রাশিয়া সফরের আগেই বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি।
জবাবে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কারণ হিসেবে সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন চিন্তা করেছে যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আগেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেনি এবং আমরা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাকেই উপযুক্ত বলে মনে করেছি।’
এই ফাঁস হওয়া বার্তার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে বলেছেন, এই ফাঁস হওয়া নথি সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ফাঁস হওয়া নথির ব্যাপারে বলেছে, এসব বিষয়বস্তু নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে—পাকিস্তানের নেতা কে হবে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থান নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান বারংবার বলেছিলেন, তাকে হটানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এবার তাই যেন সত্যি হলো!
এ জাতীয় আরো খবর..