আর্সেনাল ছেলেটির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল গত মে মাসে। প্রতিভার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে যোগ দিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি আর বায়ার্ন মিউনিখ। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আরও একটি ক্লাব আর সেটাই সবচেয়ে শক্ত—বার্সেলোনা। শেষ পর্যন্ত কাতালান ক্লাবটির ভাগ্যেই জার্মান ‘বিস্ময়-বালক’ এর শিকে ছিঁড়ল!
বিস্ময়-বালক? ব্যাখ্যাটা দেওয়ার আগে বালকের নামটা জানিয়ে দেওয়া যাক—নোয়া দারভিচ। হ্যাঁ, বালকই; মাত্র ১৬ বছর বয়সী। ফ্রেইবুর্গের ইরাকি বংশোদ্ভূত এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে গতকাল সই করিয়েছে বার্সা।
কয়েক দিন আগেই স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ ইঙ্গিতটা দিয়েছিল। গতকাল তাকে নিজেদের দলভুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বার্সার ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘২৫ লাখ ইউরোয় নোয়া দারভিচের দলবদলের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বার্সেলোনা ও ফ্রেইবুর্গ। ২০২৬ সালের ৩০ জুন তার চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। রিলিজ ক্লজ ১০০ কোটি ইউরো।’
দলবদল নিয়ে ইতালির নির্ভরযোগ্য সংবাদকর্মী ফ্যাব্রিজিও রোমানো জানিয়েছেন, ‘অ্যাড-ওনস’ বাবদ বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে মোট ৫০ লাখ ইউরো খরচ হতে পারে বার্সার। তবে এই দলবদলে বার্সা কত টাকা খরচ করেছে, সেদিকে তাকিয়ে বিষয়টি গভীরভাবে বোঝা যায় না। রিলিজ ক্লজের অঙ্কে তাকালে বোঝা যায় বার্সা তাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে চায়। তাই একেবারে নিচু স্তরের বয়সভিত্তিক দলে না রেখে বার্সার ‘বি’ দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছেলেটির প্রতিভায় বার্সা যে মুগ্ধ, তা এতেই পরিষ্কার।
চুক্তিটা আপাতত তিন বছরের হলেও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারলে মূল দলের দরজা খুলতে বেশি দেরি হবে না।
২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া দারভিচকে ইউরোপে উঠতি খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে দেখা হয়। বাঁ পায়ের এই কিশোর কৌশলগতভাবে প্রতিভাসম্পন্ন, শক্তিশালী ও ড্রিবলিংয়েও দক্ষ। দূরদর্শিতা আর পাসিংও খুব ভালো। এমনিতে মূল স্ট্রাইকারের পেছনে একটু ভেতরে খেলতে পছন্দ করেন। তবে উইং কিংবা ডিপ লেয়িং মিডফিল্ড পজিশনেও খেলতে অভ্যস্ত। খুব অল্প বয়স থেকেই কোচের যেকোনো কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সুনাম রয়েছে দারভিচের।
জার্মানির ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ের দুই মাস পর জন্ম দারভিচের। ফ্রেইবুর্গের বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠার পথেই নজর কাড়েন জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফবি)। ডাক পান জার্মানির অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। সেখান থেকে গত বছর উঠে আসেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। এ বছর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জার্মানির শিরোপা জয়ের পথে দুর্দান্ত খেলেন দারভিচ। জার্মানির ১০ নম্বর জার্সিটা তার গায়েই উঠেছিল আর এই টুর্নামেন্টেই আলো ছড়ানো আরেকজন কিন্তু এখন বার্সেলোনার। ঠিকই ধরেছেন, লামিন ইয়ামাল।
দুজনকেই ইউরোপের উঠতি ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দারভিচ তো এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে ‘ওন্ডার কিড’ তকমা পেয়ে গেছেন।
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ জার্মানির যে অঞ্চল (ব্ল্যাক ফরেস্ট) থেকে উঠে এসেছেন, দারভিচও সেখানকার। ইরাকি বংশোদ্ভূত হওয়ায় ইরাকের হয়েও খেলতে পারবেন। উঠতি প্রতিভাদের রেটিং করা ওয়েবসাইট ‘ফুটবল ট্যালেন্ট স্কাউট’ দারভিচকে ১০ এর মধ্যে ৯ পয়েন্ট দিয়ে মন্তব্য করেছে, ‘খুবই দক্ষতাসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান খেলোয়াড়। বল দখলে রাখতে পছন্দ করে। ড্রিবলিংয়ে খুব ভালো এবং চূড়ান্ত পাসটা দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।’
দারভিচ এখন কত দূর যান, সেটাই দেখার বিষয়।
এ জাতীয় আরো খবর..