শেরপুর জেলা প্রতিনিধি:
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ড্রেন খননের নামে জাইকা প্রকল্পের ৫৮ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগ উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচুড়া রাবারড্যাম প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের।
এতে এ রাবারড্যামের আওতায় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে জটিলতার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই,ডাকাবর, শালচুড়া,সন্ধ্যাকুড়া,হলদীগ্রাম,ফাঁকড়াবাদ, ভারুয়া, বাঐবাঁধা, মানিককুড়া,কুসাইকুড়া,নলকুড়া,বারোমারি এলাকায় যুগযুগ ধরে সেচ সুবিধার অভাবে বোরো মৌসুমে শতশত একর জমি অনাবাদি থাকতো।
শুধু আমন ফসলের উপর নির্ভর করতে হয়েছে এলাকার কৃষকদের। এতে ভুমিহীনে পরিনত হয় অনেক কৃষক।
কৃষকদের পক্ষ থেকে মহারশি নদীর শালচুড়ায় একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি উঠে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই। কৃষকরা জানায় বিভিন্ন সময় আশ্বাস ও পাওয়া যায়।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অবশেষে ২০১৬ সালে কৃষকদের দাবির পরিপেক্ষিতে জাইকার ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মহারশি নদীর শালচুড়া এলাকায় একটি রাবারড্যাম নির্মাণ করা হয়।
এলজিইডি'র তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে কৃষকদের অনাবাদি জমিগুলো আবাদের আওতায় আসতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। এ রাবারড্যাম নিয়ন্ত্রনে কৃষকদের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১২০০ একর জমি সেচের আওতায় এসেছে। এ রাবারড্যামে পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারন করা হলে আরো দিগুণ জমি সেচের আওতায় আসবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও এলাকার কৃষকরা।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে রাবারড্যাম প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনার কাজ সম্প্রসারনের লক্ষে জাইকার ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় ড্রেন খননের জন্য জাইকা প্রকল্পের ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
এলজিইডি'র তত্ত্বাবধানে ও বাস্তবায়নে এ ড্রেনের কাজ করা হয় মহারশি পানি ব্যবস্তাপনা সময় সমিতির সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান আলীসহ অন্যান্য সদস্যরা জানান এলজিইডি ৭/ ৮ লাখ টাকার কাজ করে পুরো কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে মর্মে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর গ্রহন করেন।
তাদের অভিযোগ কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অধিদপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কিন্তু এ ঘটনার প্রতিকারের বিষয়ে বাঁধ সাজেন সাবেক সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম। তিনি নিজে বিষয়টি দেখবেন বলে সমিতির সদস্যদের আশ্বস্ত করেন।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপের কারণে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে আর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এতে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষে বরাদ্দকৃত টাকা হরিলুট হওয়ায় সরকারি উদ্যোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে জানান কৃষকরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কয়েক মাস পুর্বে এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি তার জানা নেই। তবে ফাইলে এ ধরনের কোন অভিযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। এছাড়া তিনি কৃষকদের পক্ষ থেকে নতুন করে পুনরায় অভিযোগ দেয়ার ও পরামর্শ দেন তিনি।
এবিষয়ে শেরপুরের এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজের রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন শতভাগের বেশি ড্রেন নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা ষড়যন্ত্র।
নিয়ম অনুযায়ী রাবারড্যামের পানি বিক্রির টাকা সমিতির একাউন্টে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু সমিতির লোকজন তা করছে না। টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়ায় তারা এলজিইডি'র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..