বরিশাল নগরীর এমন কোনো এলাকা নেই যা এখন দিনে দু’বার জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হচ্ছে না। মানুষের বাড়িতে ঢুকছে পানি। খাটের উপর চুলা তুলে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে বছরের এ সময়টাতে এভাবে বন্যার পানিতে ডোবা এবং দুর্ভোগ পোহানো স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বরিশালের জন্য রীতিমতো বিস্ময়কর।
শুধু বরিশাল নগরীই নয়, দিনে দু’বার করে জোয়ারের পানিতে ডুবছে পুরো দক্ষিণ উপকূল। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী এবং পিরোজপুরসহ প্রায় সব জেলা শহরে।
পটুয়াখালী শহরের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে শহর রক্ষা বাঁধ উপচে ঢুকছে পানি। দক্ষিণাঞ্চলের আরও বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে পাওয়া গেছে এভাবে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকার খবর। গত ৩-৪ দিন ধরেই চলছে এ অবস্থা। এর আগে গেল মাসের শেষের দিকে আরও একবার অস্বাভাবিক উঁচু জোয়ারের পানিতে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও তখন জলমুক্ত ছিল বরিশাল নগরী। কিন্তু এবার আর সেই রক্ষা হয়নি। নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডে বইতে দেখা গেছে জোয়ারের স্রোত।
একই অবস্থা ছিল ভাটিখানা, নবগ্রাম, আমানতগঞ্জসহ আরও অনেক এলাকায়। স্রোত না বইলেও নিমজ্জিত হয়েছে নগরীর অন্যান্য এলাকা। কিছু কিছু জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। সবচেয়ে করুণ অবস্থা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর। নগরীর পলাশপুর এলাকার বহু ঘর-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিনে দু’বার করে ডুবছে হাঁটু এমনকি কোমরপানিতে। স্মরণাতীতকালের রেকর্ড ভেঙে এভাবে জোয়ারের পানিতে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণ উপকূল প্লাবিত হওয়ার ব্যাখ্যায় মৌসুমি বায়ুর প্রভাব, উজান থেকে নামতে থাকা বন্যার পানি এবং অস্বাভাবিক উঁচু জোয়ারের কথা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফিউদ্দিন বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি আমরাও লক্ষ্য করেছি। নদ-নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাসের কারণেও এমনটা হতে পারে।
পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ উপচে শহরে পানি ঢোকার বিষয়ে তিনি বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়তো এটা হয়েছে। বরিশাল অঞ্চলে এমন বহু বাঁধ রয়েছে যেগুলো গত ১৫-২০ বছরেও মেরামত করা হয়নি। পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে বহু বাঁধের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। স্বাভাবিক নিয়মেই বহু ব্যবহারে এগুলোর উচ্চতা কমেছে। এ কারণেই বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশাল নগরীসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী তীরে রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া নদ-নদী এবং সাগরের জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা এবং বাগেরহাট এলাকার সাগর তীরবর্তী বাঁধগুলো উঁচু করে নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।