×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১২-০৮
  • ৫৬ বার পঠিত
এম সাহাবউদ্দিন সাবু, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা। বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচেপড়া ভীড়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি থাকলেও তারা পাচ্ছেন না সেবা। আতঙ্কে কাটছে তাদের সময়। এসব বিষয় দেখভালের জন্য অফিসে নেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা ও দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।

এদিকে ঘড়ির কাঁটায় সময় এগিয়ে চলছে। বাড়ছে অপেক্ষা। বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ডা. আমরুল্লাহকে। আপেক্ষার এক পর্যায়ে অফিসরুমে গিয়ে কথা হয় কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ কৃষ্ণ কুমার পালের সঙ্গে। তিনি একটি ছুটির দরখাস্ত দেখিয়ে বলেন ইউএইচএফপিও ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

হাতে পাওয়া ছুটির দরখাস্ত নিয়ে কথা হয় বরগুনা সিভিল সার্জনের সঙ্গে। অফিসে ছুটির দরখাস্ত রেখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বিধিবহির্ভূত জানিয়ে তিনি বলেন, ইউএইচএফপিও ছুটি নেননি। অনুমতি নেননি অফিসের বাহিরে যাওয়ার। তাই তার অফিসেই থাকার কথা।

এর কিছুক্ষণ পরে ফোনে পাওয়া যায় ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহকে। তিনি জানান, ফিল্ড ভিজিটে ব্যস্ত তিনি। তাই অফিসে আসতে পারেননি। এ সময় মাঠে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রমতে, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন দেড় শতাধিক রোগী। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন চিকিৎসকের অনুকূলে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা দিনমজুর বশির হাওলাদার সোনালী কণ্ঠকে  বলেন, মাঝে মাঝে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসি, বলে ডাক্তার নাই মিটিংয়ে গেছে। নার্সেরা বওয়া থাহে। দুইডা প্যারাসিটামল আর দুইডা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরাইয়া হাডাইয়া দেয়। কয় সাপলাই নাই ওষুধের। ওদিকে দেখি ট্রাক ভইরা ভইরা ওষুধ আয়।

নিপা বেগম নামের এক রোগী বলেন, এখানে অনেক সব সময় ডাক্তার মিটিংয়ে গেছেন বলে পরে আসতে বলেন। আবার অনেক সময় বলে আগামীকাল আসেন। আবার ওষুধ যা দেয় তা এখান থেকে পাওয়া যায় না, বাইরে থেকে কিনতে হয়। প্রায় সময়ই ডাক্তারের রুম তালাবদ্ধ থাকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ কৃষ্ণ কুমার পাল জানান, ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ ছুটি নিয়ে ট্রেনিংয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আমার কাছে ছুটির দরখাস্ত জমা আছে।

ছুটিটি মঞ্জুর করতে না পাঠিয়ে অফিসে রাখা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।

অফিসে না থাকার বিষয়ে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, আমি ফিল্ড ভিজেটে আছি। কী সমস্যা বলেন।

তার কাছে অফিসে থাকা ছুটির দরখাস্ত ও সিভিল সার্জন ছুটির বিষয়ে অবগত নয় জানিয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি এড়িয়ে গিয়ে আবারো একই কথা জোর দিয়েই বলেন, আমি ফিল্ড ভিজিটেই আছি। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন।

বিষয়টি নিয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী জানান, বুধবারও অফিস করেননি ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ। তার অনুপস্থিতি স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল সোনালী কণ্ঠকে  জানান, ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ আমার কাছ থেকে ছুটি নেননি। ছুটিতে যেতে হলে আমার কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে যেতে হবে। নিজের টেবিলে ছুটির দরখাস্ত রেখে ছুটিতে যাওয়ার কোনো অনুমোদন নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat