মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ মোবারক হোসেন
শিবালয়ে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সার সরবরাহের অভিযোগ মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় কৃষকদের কাছে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ (টিএসপি) সার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, নিম্নমানের এসব সার ব্যবহার করায় ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন কৃষি বিপণন কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা টিএসপি সারের প্যাকেট মেয়াদ উত্তীর্ণ , বস্তার ভেতরে সার দলাপাকানো ও রং নষ্ট হয়েগেছে । তবুও এসব টিএসপি সার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অনেক সময় কৃষকরা অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে মেয়াদোত্তীর্ণ সার সংগ্রহ করে তা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিবালয় উপজেলার কৃষক শফি বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কাছে যে সার বিক্রি করা হচ্ছে, তার মান খুবই খারাপ। ব্যবহার করার পর ফসলের কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং ক্ষতি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কৃষক পটল মোল্লা বলেন, বরি মৌসুমে এমনিতেই টিএসপি সারের সংকট ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছেনা। তারপরেও যে সার পাওয়া যাচ্ছে ডিলারের দোকানে পুরো বস্তাই চাপা ধরা মেয়াদহীন। তাছাড়া সারের বস্তার গায়ে কোন মেয়াদ কাল লেখা নেই। নিম্নমানের এ সার জমিতে ব্যবহার করে কোন উপকারতো হচ্ছেনা বরং ক্ষতি হচ্ছে। এ সার ব্যবহারের ফলে কৃষক যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি সরকারের শস্য উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা পূরণ হচ্ছেনা।
কৃষক কায়সার বলেন, একবিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করতে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এবার এমনিতেই টিএসপি সার পর্যাপ্ত পরিমান পাওয়া যাচ্ছেনা। তারপরেও যে সার পাওয়া যাচ্ছে দলা দলা মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের। এ সার জমিতে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এগুলো দেখভালের জন্য দ্বায়িত্ব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ব্লক সুপারভাইজারের। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এদের কাউকে চিনিনা আমরা আর কখনো ফসলের মাঠেও পাইনি এদের।
তেওতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সারের সাব- ডিলার আলমগীর হোসেন বলেন, চাহিদানুযায়ী টিএসপি সার পাওয়া যাচ্ছেনা। এই মৌসুমে ফ্রেশ টিএসপি সার পাইনাই, বস্তার ভেতরের সার সবই দলা।
তেওতা ইউনিয়নের( বিএডিসি) সার ডিলার আনন্দ মোহন ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী আনন্দ কুমার ঘোষ বলেন, এ সারের কোন মেয়াদকাল নাই দলা টিএসপি সারে কোন সমস্যা নাই। সারের বয়স যতবেশি হবে ততো জমির জন্য ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে টিএসপি সারের চাহিদা দেওয়া হয়েছিলো ৯৪৩ মে:টন বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩৭৫ মে:টন মজুদ আছে ৪৭ মে:টন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার জানান, বাজারে যে টিএসপি সার সরবরাহ করা হয়েছে তার গুনগত মান ঠিক আছে। এই সার ব্যবহারে ফসলের ক্ষতি অথবা শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, এ বছর রবি মৌসুমে উপজেলায় আট হাজার ৪ শো ১৩ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৪শো ৫২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১২ হেক্টর জমিতে গম, ২৬ হেক্টর জমিতে আখ, ৪১ হেক্টর জমিতে আলু,১১ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ২৪ হেক্টর জমিতে খেসারী, ৫ শো ৭০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, চার হেক্টর জমিতে মশুর, ৩৩৮ হেক্টর জমিতে মরিচ, ১৫ শো ৮৫ হেক্টর জমিতে (পেয়াজ+ শাক),৮৮ হেক্টর জমিতে রসুন, ২১ হেক্টর জমিতে ধনিয়া ও সাত হেক্টর জমিতে কালোজিরাসহ মোট ১২ হাজার হেক্টর জমিতে শস্য উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..