কলাপাড়া সংবাদদাতাঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক যুগ পর তিন সন্তানসহ স্ত্রী সুরমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে সংসার পেতেছেন স্বামী বশির খান। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অবুঝ শিশু জোবায়েরের ভবিষ্যৎ। মরিয়ম ও জামিলার শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত। স্থানীয় শালিস বৈঠকে সমাধানের পথ খুঁজে না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন স্ত্রী সুরমা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের রত্তন খানের পুত্র বশির খানের সাথে ২০১২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সুলতানা সুরমা। সুখের সংসার চলার পথে ২০১৯ সালে উপার্জনের তাগিদে বিদেশে পারি জমায় স্বামী বশির খান। নয় মাস পড়ে বাড়িতে এসে মোবাইল যোগে অধিক সময় ফোনালাপের পাশাপাশি অস্বাভাবিক আচরণ আর পরকীয়ায় আসক্ত নিশ্চিত হলে স্ত্রী সুরমার মনে বিভিন্ন প্রশ্ন। সুরমা এর প্রতিবাদ করলে শুরু হয় শারীরিক যন্ত্রনা। এক পর্যায় শ্বশুর ও শ্বাশুড়ীর কাছে অভিযোগ তুললে ছেলের অপরাধ সাধারন বিষয় বলে এড়িয়ে যান তারা।
প্রবাসে থাকাকালীন পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে বশির খান। বাড়ি ফিরে স্ত্রী সুরমাকে পরনারীর কথা প্রকাশ করতে না পারায় ২০২২ সাল থেকে শুরু হয় বিদেশে যাওয়ার নাটকীয় মনোভাব। এর জন্য স্ত্রীকে তার শ^শুড়ের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য প্রায় চাপ দেয় বশির। ধীরে ধীরে শুরু হয় অনাকাঙ্খিত মানসিক যন্ত্রনা। এ অত্যাচার চলে গত দুই বছর ধরে।
সর্বশেষ গত দুই মাস আগে বেধরক মারধরের কারনে গুরুতর অবস্থায় কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স্রে ভর্তি হয়ে ৩ দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে সুরমাকে। সুরমার চিকিৎসাকালীন অনুপস্থিতির সুযোগে বশির খান বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরকীয়া প্রেমিকা শিরিন আক্তারকে। সুরমা চিকিৎসা শেষে স্বামীর বাড়ি ফিরলে ঘরে তালা দিয়ে বের করে দেয় বশির। এক পর্যায় সন্তানসহ চলে আসতে বাধ্য হয় সুরমা। মূলত নতুন করে বিয়ে করে সংসার করার উদ্দেশ্যে বিদেশে যাবার যৌতুকের ঘটনা ছিল শুধুমাত্র নাটকীয়তা। বাবার বাড়িতে দুই মাস ধরে মানসিক যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে মেয়ের পাশাপাশি মা-বাবাও। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সুরমা ও তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন। এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছে না সুরমা ও তার বাবা মা।
এমন অবস্থায় যন্ত্রনায় কাতর সুরমা তার বাবার বাড়িতে থেকে বিচার পাওয়ার জন্য ঘুরছেন অন্যের দ্বারে দ্বারে। ১১ বছরের বড় মেয়ে মরিয়ম জান্নাতি আলীপুর মহিলা মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেনীতে আর ৭ বছরের জামিলা আক্তার বিথি খাজুরা বাহামকান্দা নুরানী মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। অবুঝ শিশু জুবায়ের মায়ের কোলে আর খেলাধুলা নিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করছে। সন্তানরা বুঝে ওঠতে পারছে না কি হবে তাদের জীবনে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠকেও মেলেনি কোনো সমাধান। কোনো উপায় না পেয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করেন সুলতানা সুরমা।
সুলতানা সুরমা একই উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামের মো. আবুল বাসার রাড়ি‘র একমাত্র কণ্যা। সুরমার প্রতিবেশী মো. আলতাফ সরদার বলেন, আমাদের দেখা মতে ছোটবেলা থেকে সুরমার চলার পথে কোনো ত্রæটি বিচ্যূতি আমাদের চোখে পড়ে নাই। বিয়ের আগে থেকেই দেখেছি তার মাকে সাংসারিক কাজে বেশ সাহায্য সহযোগীতা করে আসছে।
প্রতিবেশী হাজী আবদুর রহমান বলেন, সুরমার এমন ঘটনা শুনে আমিও তাদের বাড়িতে যাই। ওর শ^শুড় শ^াশুড়ীর সাথে কথা বলি। তারা কোনো কিছু আমলে নেয় না। কলাপাড়া ও কুয়াকাটার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করেও কোনো ফল পাই নাই। বর্তমানে সে তার বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে পড়ে আছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান শহীদ মাতুব্বর জানান, সুরমা নামের মেয়েটার বিষয়ে আমিও মীমাংসার বৈঠকে ছিলাম। তাকে তালাকও দেয় নাই, আর কোনো খোঁজ খবরও নেয় না। কি কারনে সুরমাকে মারধর করেছে, কেন রাখবে না কি দোষ বশির ও তাদের বাড়ির পক্ষ থেকে কিছুই জানতে পারি নাই। শেষ পর্যন্ত তাকে আইনের সাহায্য চাওয়ার জন্য বলেছি।
এদিকে বশির খান ফেনী জেলার সদর পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের মাষ্টার প্যাদা মহল্লার মহিন উদ্দিন এর মেয়ে শিরিনা আক্তারকে বিয়ে করে কুয়াকাটার খাজুরা গ্রামের বাড়িতে সংসার গোচাচ্ছেন ওই পরকীয়া জুটি।
অপরদিকে সুরমার বিরুদ্ধে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে মহিপুর থানায় বশির খান একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মহিপুর থানার সহকারি উপ পরিদর্শক ইউনুস মোল্লাকে তদন্তের দায়িত্ব ভার অর্পন করে মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক সত্যতা উদ্ঘাটন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বশির খানের আবেদনের কোন সত্যতা পাওয়া যাই নাই। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টামাত্র। তাছাড়া ওই প্রতিবেদনে স্থানীয় শালিস বৈঠকে বশির খান ও তার পরিবারের সদস্যদের গাফিলতির প্রমাণের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..