এমদাদুল হক, স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমে অতিরিক্ত সেবা চার্জ আদায়ের বিষয়টি সম্প্রতি বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
প্রতি আসনের জন্য ২০ টাকা অতিরিক্ত সেবা চার্জ নেওয়া হচ্ছে, যা বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে। একাধিক আসন বুকিংয়ের ক্ষেত্রে এই চার্জ একাধিকবার নেওয়া হচ্ছে, যা যাত্রীদের জন্য আর্থিকভাবে অস্বস্তিকর এবং অযৌক্তিক বলে অভিযোগ উঠেছে।
অতিরিক্ত সেবা চার্জের কারণে পর্যটকদের আর্থিক চাপ বর্তমানে রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমে প্রতি আসনের জন্য ২০ টাকা অতিরিক্ত সেবা চার্জ ধার্য্য করা হয়েছে। তবে, একাধিক আসন বুকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি আসনের জন্য এই চার্জ পুনরায় নেওয়া হচ্ছে। যর ফলে, এক পরিবারের সদস্যরা বা একাধিক পর্যটক যদি একসঙ্গে টিকিট বুক করেন, তাদের জন্য এই অতিরিক্ত খরচ বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, চারজনের একটি পরিবার যদি একসাথে ট্রেন ভ্রমণ করে, তবে তাদের ৮০ টাকা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়, যা অনেকের জন্য আর্থিকভাবে অসুবিধাজনক।
এ বিষয়ে এক পর্যটক বলেন, "আমরা যখন একসাথে চারটি আসন বুক করি, তখন ২০ টাকা করে ৮০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং অযৌক্তিক। এমনিতেই দেশে ট্রেন টিকিটের দামও কম নয়, অতিরিক্ত সেবা চার্জ বিষয়টি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।"
বিশ্লেষকদের অভিমত: সেবা চার্জের পরিমাণ পুনঃমূল্যায়ন জরুরী।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেলওয়ের সেবা চার্জ নীতি দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং যাত্রীদের স্বার্থে উপযুক্ত নয়।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন ই-প্রেস ক্লাব এর উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ ফজলুল কবীর বলেন, "অতিরিক্ত সেবা চার্জ পর্যটকদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষত যারা কম খরচে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য এটি আর্থিকভাবে অসুবিধাজনক। একাধিক আসনে বারবার এই চার্জ নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।"
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দেশের প্রথম এবং একমাত্র পর্যটন ভিত্তিক গণমাধ্যম "বাংলাদেশ ট্যুরিজম নিউজ এজেন্সি" র নির্বাহী সম্পাদক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম আজাদ খান পর্যটন বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময়ে পর্যটন বিশেষজ্ঞরা জানান, "যাত্রীদের সুবিধার্থে সেবা চার্জের পরিমাণ সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জরুরীভাবে পুনঃমূল্যায়ন করা প্রয়োজন।"
যাত্রীদের মধ্যে অতিরিক্ত সেবা চার্জের বিষয়ে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ায়, বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার ফেডারেশন, পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ যাত্রীরা সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সরকার এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত এই সেবা চার্জের নীতি পুনঃমূল্যায়ন করা এবং যাত্রীদের জন্য একটি সহনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার ফেডারেশনের এক প্রতিনিধি বলেন, "এটি সরাসরি জনগণের পকেট থেকে অর্থ কেটে নেওয়ার মতো একটি ঘটনা। সরকারকে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে যাত্রীদের আর্থিক বোঝা কমানো যায়।"
রেলওয়ের অবস্থান: সেবার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেবা চার্জ ডিজিটাল সিস্টেমের উন্নয়ন এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, যাত্রীদের অসুবিধার বিষয়টি তারা লক্ষ্য করছেন এবং এটি সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা চাই ডিজিটাল সিস্টেম আরও কার্যকর এবং দ্রুত হোক, তবে আমরা জানি, যাত্রীদের থেকে যে অতিরিক্ত সেবা চার্জ নেওয়া হচ্ছে তা কিছুটা অসুবিধাজনক। এই বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার আনব।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেবা চার্জের এই পদ্ধতি পর্যটন খাতে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, “একটি নির্দিষ্ট অংক চার্জ করা যেতে পারে, তবে একাধিক আসনে বারবার এই চার্জ নেওয়া উচিত নয়। এটি যাত্রীদের উপর অত্যধিক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। এর পরিবর্তে সেবা চার্জের পরিমাণ পুনঃমূল্যায়ন করা উচিত।”
বিশেষজ্ঞরা আরও যোগ করেন, "যাত্রীদের জন্য সেবা গ্রহণের পরিমাণ ও মান সমন্বয় করতে হবে, যাতে এটি আর্থিকভাবে সহনীয় হয় এবং রেলওয়ের সেবার মানও বৃদ্ধি পায়।"
"বাংলাদেশ ট্যুরিজম নিউজ এজেন্সি" র বক্তব্য-
বাংলাদেশ ট্যুরিজম নিউজ এজেন্সি দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন ও যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবসময় সচেতন এবং অনুপ্রাণিত।
রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমে অতিরিক্ত সেবা চার্জ আদায়ের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা দেশীয় পর্যটন এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য এক ধরনের আর্থিক বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের চার্জ ব্যবস্থাপনা দেশের পর্যটন খাতের সুষ্ঠু বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করতে হবে। অতিরিক্ত সেবা চার্জের এই পদ্ধতি যাত্রীদের আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই, আমাদের আহ্বান সরকারের কাছে—যত দ্রুত সম্ভব এই নীতির পুনঃমূল্যায়ন করে, যাত্রীদের জন্য সহনীয় এবং সুবিধাজনক সেবা চার্জ কাঠামো তৈরি করতে হবে। শুধুমাত্র সেবা চার্জের পরিমাণই নয়, সার্বিকভাবে ট্রেন ভ্রমণের সেবার মান উন্নত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
পর্যটন খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ-
বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতের সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রেলওয়ের এই অতিরিক্ত চার্জের নীতি দেশের পর্যটন খাতের জন্য এক ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি একটি বিরাট অসুবিধা হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম নিউজ এজেন্সি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানাচ্ছে যে, রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমে অতিরিক্ত সেবা চার্জের এই নীতি পর্যটকদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের উচিত সেবা চার্জের সিস্টেম পুনঃমূল্যায়ন করা এবং রেল সেবাকে জনগণের জন্য আরো সহনীয় করে তোলা। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন শিল্পের বিকাশে সাহায্য করবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে। যাত্রীদের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে এই অতিরিক্ত সেবা চার্জ পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে, যাতে দেশের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হতে পারে।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, "বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের উৎসাহিত করার জন্য এই অতিরিক্ত চার্জের বিষয়টি পুনঃমূল্যায়ন করা উচিত। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য খরচ কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।"
এ জাতীয় আরো খবর..