ইব্রাহিম মুকুট ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মহানগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের নিজ কল্পা গ্রামের বাসিন্দা শহীদ আনোয়ার হোসেন। পেশায় ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের গাড়ি চালক। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চ রাতে ঐতিহাসিক খাগডহর যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্পে ( বর্তমান বিজিবি ক্যাম্প) ভারী অস্ত্রসহ পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালিদের উপর আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠি,বৈঠা হাতে সশস্ত্র পাক হানাদার বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পরে। তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলার পর সাধারণ জনতার সাথে পাক বাহিনীর ১৫ ঘন্টা ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এই যুক্তে ১৩৮ জন পাক হানাদার নিহত হয় এবং ৪ জন বাঙালি শহীদ হন।এই চার শহীদের মধ্যে একজন নিজ কল্পা গ্রামের আনোয়ার হোসেন। মাইকে যুদ্ধের খবর পেয়ে তিনি ঘরে স্ত্রী এবং ২১ দিন বয়সী কন্যা ইয়াসমিনকে রেখে ছুটে যান ইপিআর ক্যাম্পে।বীর যোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সশস্ত্র পাকবাহিনীর সাথে খালি হাতেই যুদ্ধ করতে করতে ক্যাম্পে ঢুকে পড়েন এবং পাক বাহিনীর গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। ক্যাম্প থেকে অস্ত্র বোঝাই করে গাড়ি নিয়ে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসার সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেট তাঁর মাথা এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয়।সাথে সাথেই তিনি গাড়ির ভিতরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শহীদ হন।সে রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর ফিরোজা খাতুন আর স্বামীর মুখ দেখতে পাননি।রেখে যাওয়া ২১ দিনের সেই শিশু কন্যার বয়স আজ ৫৪ বছর ২১ দিন।
স্বামীর স্মৃতি বুকে আগলে রেখে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে পাড় করে দেন তাঁর সারা জীবন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্পে ( বর্তমান বিজিবি ক্যাম্প) সম্মুখ যুদ্ধটি একটি আলোচিত যুদ্ধ।স্বাধীনতার এত বছর পরও কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি। পায়নি তারা রাস্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা।সরকারি গেজেটে শহীদ মুক্তি যোদ্ধার নাম থাকলেও বাবার নামের বানান ভুল থাকায় এখনো পর্যন্ত কোন ভাতা পায়নি আনোয়ার হোসেনের পরিবার।উল্লেখ্য ২০০৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটে অতিরিক্ত সংখ্যা ১২১৬ নম্বর নামের তালিকা শহীদ আনোয়ার হোসেন। ২৭ মার্চ বুধবার ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের(মসিক) মেয়র এই শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান নিজ কল্পার বাড়িতে।মেয়রের উপস্থিতিতে আশেপাশের বহু মানুষ ছুটে আসে এই শহীদের বাড়িতে।মেয়রকে কাছে পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী ফিরোজা খাতুন এবং কন্যা ইয়াসমিন।নব নির্বাচিত মসিক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল টিটু এই তিনটি শহীদ পরিবারের সাথে উপহার সামগ্রী নিয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।শহীদ আনোয়ার হোসেন সহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।এসময় তাঁর সাথে ছিলেন ৩০ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর আবুল বাশার,বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল,প্রধান সমন্বয়কারী কবি সংগঠক মোঃ আলী ইউসুফ,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক কবি মোস্তাফিজুর বাসার ভাষাণী, সাংবাদিক গবেষক কবি স্বাধীন চৌধুরী, সংস্কৃতি সংগঠক চারুশিল্পী মোঃ রাজন,সংস্কৃতি সংগঠক ও মহানগর আওয়ামী লীগ সদস্য হাসনাত জামান সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।৫৪ বছরের এই দীর্ঘ সময়ে এই প্রথম দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তি তাদের বাড়িতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..