বরগুনা সংবাদদাতা: স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের ভুমিকা অপরিসীম তাদের একজন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান খান বাদশা, এই বীর সন্তান মৃত্যুর আগে তার বাড়ির সম্মুখে করে যান একটি স্মৃতিফলক গেট। তার নামসংবলিত গেটটি ভাঙাসহ বাসার অভ্যন্তর দিয়ে সড়কপথ বের করতে স্থানীয় একটি বিশেষ মহল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের জাল পেতেছেন।
এক্ষেত্রে খোদ সিটি কর্পোরেশনকেও ব্যবহার করার চেষ্টা করে চলছে অভিযুক্ত চক্রটি, যদিও সেখানে সন্ত্রাসী ভুমি দস্যুরা প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয়রা জানান বীর মুক্তিযোদ্ধার বাসার ভেতরে চলাচলের পথ রয়েছে দাবি করাসহ তার নামকরণে নির্মিত গেটটি অপসারণের আর্জি রেখে সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ করেন অভিযুক্ত ইমরান হোসেন রকি তিনি বাংলাবাজার এলাকার আব্দুস সালাম কশাইয়ের ছেলে। তাঁরা আরও বলেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান খান বাদশার বাসার পেছনের অংশে অর্থাৎ তাদের সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া সালাম কশাইয়ের একখণ্ড জমি রয়েছে, যেখানে প্রবেশ করতে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির অভ্যন্তর দিয়ে গেলে ওই ভূমিতে যাতায়াতে কয়েক মিনিট সময় লাগে।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অভিযোগ, তাদের বাড়ির অভ্যন্তর থেকে সড়কপথ করা গেলে পার্শ্ববর্তী সালাম কশাইয়ের ভূমির মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, এই সুযোগে উঠেপড়ে লেগেছেন সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরসমূহে মিথ্যে অভিযোগ করে হরয়ানির ওপরে রাখছে আমাদের। এতকিছুর পরেও কোনো সুবিধা করতে না পারায় প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত সন্ত্রাসী রকি ও বায়েজীদ সহ তাদের সহযোগীদের নিয়ে জীবননাশের হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আমার মা ফাতেমা বেগম, এ ঘটনায় সরেজমিন অনুসন্ধান করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার তাপস।
সিটি কর্পোরেশনের এই মাঠকর্মী জানান, অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তিনি উপরস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেখানে গিয়েছিলেন সকল তথ্যও সংগ্রহ করেছেন, যা পরবর্তীতে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে তার ভাষ্য হচ্ছে, সালাম কশাইয়ের ছেলে আর্জিতে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির অভ্যন্তরে তাদের সড়কপথ আছে দাবি করলেও সরেজমিনে তার কোনো অস্থিত্ব মেলেনি। তিনি বলেন মূলত এই গেটটির সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করার পরপরই হয়রানির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় সালাম কশাইয়ের ছেলেরা। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, অভিযুক্তদের বাসার পেছনের ভূমির বাসিন্দাদের চলাচলের দুটি সড়ক রয়েছে। সেই পথ দিয়ে চলাচল না করে তাদের বাসার ভেতর থেকে সড়ক করতে চাইছে। পাশাপাশি জাতির বীর সন্তানের নামফলকটি ভেঙে ফেলতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে খুনের হুমকি দিচ্ছে। ফাতেমার অভিযোগ সালাম কশাইয়ের নেতৃত্বে জমির দালাল সোহরাব, সামীম, সাদ্দাম, বাবু সহ কয়েকজন মিলে এই মিশন বাস্তবায়ন করতে পারলে তারা অর্থবিত্তে লালে লাল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার বাসার অভ্যন্তর দিয়ে সড়ক করা গেলে সালাম এবং সোহরাবসহ এই মিশনে যারা সম্পৃক্ত তাদের ভূমির মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তবে ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে সড়ক নির্মাণ এতসব ঘটে গেলেও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদ। বরং তিনি বলছেন, কারও সড়কের প্রয়োজন হলে জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে হয়, কিন্তু যারা এসব করছে তাদের কেউই তাকে কিছু অবহিত করেনি।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির অভ্যন্তর থেকে রাস্তা করারও কোনো সুযোগ নেই। তবে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে আপস করা গেলেও তাদের পুকুপরের দক্ষিণ পাড় থেকে একটি সড়ক হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি বিসিসি পর্যন্ত গড়িয়েছে জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, সেখানে কি সিদ্ধান্ত হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
অবশ্য মুক্তিযোদ্ধার বাসার অভ্যন্তর দিয়ে সড়ক নেওয়ার এই অপচেষ্টায় সংক্ষুব্ধ হয়ে আছেন স্থানীয়রাও। তাদের দাবি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র রোধিত করা না গেলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবার-পরিজনের ওপর অত্যাচার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় সুশীলসমাজ বলছেন, মুক্তিযোদ্ধার নামফলক ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের কোনো ছাড় না দিয়ে বরং আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। তাছাড়া বীর সন্তানের ছেলেদের মারধর করাসহ খুন জখমের হুমকি দেয়,এ চক্রের খুঁটির জোর কোথায় তা প্রশাসনেরও খতিয়ে দেখা জরুরি জানান তাঁরা।
এ জাতীয় আরো খবর..