স্বাধীন বাংলা, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এলাকার অর্থনৈতিক অন্যতম চালিকা শক্তি কেরুজ চিনিকল। প্রতিষ্ঠার পরপরই মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যসেবার কথা ভেবেই নির্মাণ করা হয় হাসপাতালটি । তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসার একমাত্র মাধ্যম ছিলো দর্শনা কেরুজ এ হাসপাতাল। সে সময় হাসপাতালটির ছিলো রমরমা অবস্থা। চিকিৎসা সেবার সোনালী সে অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে করুণদশায় পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি। শুয়ে বসে সময় পার করেন হাসপাতালের প্রতিটি স্টাফ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস এর দোহায় দিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের সামান্য ব্লাড প্রেসার টুকুও মেপে দিতে নারাজ তারা। এছারাও চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে হাসপাতালের স্টাফ নার্সদের বিরুদ্ধে অত্র প্রতিষ্ঠানের নিরীহ শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরন এর অভিযোগ পাওয়া গেছে । দেশের শিল্প স্থাপনাগুলোর মধ্যে দর্শনা কেরুজ চিনিকল একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ দর্শনায় চিনিশিল্প, ডিস্টিলারি ও বাণিজ্যিক খামারের সমন্বয়ে এ বৃহত্তর শিল্প কমপে¬ক্সটি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৩৮ সালের মিলটি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই অঞ্চলের আখ-চাষি, মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সেবার কথা ভেবে মিল কর্তৃপক্ষ ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল স্থাপন করে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ অঞ্চলে তেমন কোন চিকিৎসা কেন্দ্র ও ভালো চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা চিকিৎসা সেবার জন্য ভিড় জমাতো এই কেরুজ হাসপাতালে।
চিকিৎসা সেবার পাশপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতো। নিময়মাফিক হাসপাতালে কর্মরত ৩ জন চিকিৎসকসহ ২৫-২৬ জন স্টাফ চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়োজিত থাকতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও ২ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকতেন। প্রায় ১ যুগ ধরে ২ জন চিকিৎসকের স্থলে দেখা মিলে ১ জনকে। সে থেকে একজন চিকিৎসকই দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। বর্তমান অবস্থার তার পুরোটাই উল্টো। অতীতের তুলনায় হাসপতালাটির পরিচালনা ব্যায় বৃন্ধি পেলেও কমেছে চিকিৎসা সেবার মান । এখন ৩ শিফটে মাত্র ১ জন চিকিৎসকই দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসকের বাড়ি জীবননগর হওয়ায় তিনি প্রায় সময় বাড়িতে যাতায়াত করে থাকেন। নেই কোনো জরুরি ব্যবস্থা। আর এ ধরনের পরিণতির কারণ চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা নড়বড়ে।
হাসপাতালে সবসময় ৩ জন চিকিৎসক, ১ জন কম্পাউন্ডার, ১ জন ড্রেসার, ২ জন নার্স, ১ জন আয়া, ১ জন ওয়ার্ডবয় ও ১ জন মিউওয়াইফ ও ৩ জন সুইপার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ১ জন এবং স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক ২ জন নার্স। ফলে ১ জন চিকিৎসককেই ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত থাকতে হয়। নিয়োগকৃত চিকিৎসক শাহিনুর হায়দার প্রায় ২৬-২৭ বছর কর্মরত রয়েছেন কেরুজ হাসপাতালে। তবে জরুরি চিকিৎসার জন্য কোন রোগী হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকের সাথে সাধারণ নার্স মোবাইলে যোগাযোগ করে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়ার অভিযোগো রয়েছে। প্রতি বছর অসুস্থ শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য লাখ লাখ টাকার ঐষুধ বরাদ্দ থাকলেও নাম মাত্র এন্টাসিড বা নাপা ট্যাবলেট ব্যতিত অন্য কোন ঐষুধ মেলেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক। সেসকল ক্লিনিকের তুলনায় কেরুজ হাসপাতালটির বার্ষিক পরিচালনা ব্যায় বেশী হলেও এটি সেকেলেই রয়ে গেছে। হাসপাতালটি অতীত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আধুনিকায়ন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন অপরেশন থিয়েটার, সার্জিক্যাল চিকিৎসক, নিয়মিত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তাবাবুর তদারকি। তাহলে হয়তো অনেকেই অল্প খরচে ভালো চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে কেরুজ হাসপাতাল থেকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এর প্রতিসচেতনমহলও,শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি দেশের এই করোনা কালীন ক্রান্তিলগ্নে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে তিনি যেন হাসপাতালটির সেবারমান উন্নয়নে সুদৃষ্টি দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন।