এক মাসের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমে গেছে। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে দুই খাতে আয় কম হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ও গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ জুনের তুলনায় যেমন কমেছে, তেমনি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায়ও কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাতেই নিæগতি দেখা দেওয়ায় সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা আরও চাপে পড়বে।
সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে রপ্তানি আয় থেকে বাকি ২৮ শতাংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। অন্যান্য খাত থেকে আসে মাত্র ২ শতাংশ। ফলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স এই দুটি খাতে আয় কমে গেলে সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে পড়ে।
কারণ আয় কমলেও ব্যয় কমানো যাচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ঘাটতি হচ্ছে। এতে দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।
জুলাইয়ে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৫৯ কোটি ডলার। জুনে হয়েছিল ৫০৩ কোটি ডলার ও মে মাসে হয়েছিল ৪৮৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে মে ও জুনের চেয়ে জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কমেছে। তবে এপ্রিলের তুলনায় বেড়েছে। আবার নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রপ্তানি আয় প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলারের উপরে ছিল।
সে হিসাবে ওই মাসের তুলনায়ও রপ্তানি আয় কমেছে। তবে গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ আয় বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়েছে আড়াই শতাংশ। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয় ওঠানামা করছে। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা মাসিক ওঠানামাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি।
জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জুনে এসেছিল ২২০ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২১০ কোটি ডলার। গত জুন ও গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত জুনে। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। মার্চে ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। এপ্রিল ও মে মাসে তা কমে যায়।
এমন কি রোজার ঈদের মাসেও রেমিট্যান্স কমেছিল। গত অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট, মার্চ ও জুনÑএ ৪ মাস প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল। বাকি ৮ মাস প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি ডলারের কম এসেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৪৮ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪৫৯ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গত বছর একই সময় আয় হয়েছে ৩৯৮ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ইপিবি’র তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৭৭ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ৪৬৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
একই ভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৭ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৯ কোটি ৮ লাখ ডলার। আয় বেশি হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এ সময় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৩৭ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪৪৮ কোটি ডলার। আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ কোটি ৯ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ডলার। আয় কম হয় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময় আয় হয় ১ কেটি ৪ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৭ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৭ কোটি ২ লাখ ডলার। আয় বেশি হয়েছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। আয় হয় ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। আয় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ কম হয়েছে ও প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এ জাতীয় আরো খবর..