একজন সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুস্থ রোগীদের ওষুধ নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। গরিব মানুষের জন্য সুদমুক্ত ঋণের অর্থ বিতরণ না করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জেলা ও উপজেলা সফরের সময় তাদের আপ্যায়নের নামে সাধারণ কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন। সমাজসেবার উপজেলা পর্যায়ের অফিসের প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা বাবদ অধিদপ্তর থেকে দেওয়া বরাদ্দের অর্থ ভুয়া বিল ভাউচারে আত্মসাৎ করছেন। এছাড়া সরকারি ল্যাপটপ পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। এতসব অভিযোগ আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
অপর একজন সমাজসেবা সংগঠক বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ও বয়স্ক ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, উপবৃত্তি এবং প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ বিতরণ না করে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছেন। উল্লিখিত অপরাধের বিবরণ তুলে ধরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মচারীরাই সমাজকল্যাণ সচিবের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক সমাজসেবা অফিসার মো. নাজমুল হোসেনকে বদলি করেছি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত প্রতিবেদনে যা উঠে আসবে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা সমাজকল্যাণ সংগঠক জিয়াবুল হোসেনের অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা প্রসঙ্গে সচিব জানান, বিষয়টি এই মুর্হূর্তে মনে আসছে না। তবে যে অন্যায় করুক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কোন ছাড় নেই।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৫ জুলাই আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার সহকর্মী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের উচ্চমানসহকারী মো: মনিরুজ্জামান। অভিযোগের বিবরণীতে বলা হয়, সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন গত অর্থবছর ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য পাওয়া বরাদ্দের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় সন্ধা রানী নামে একজনকে একটি গাভী ক্রয় করে দিয়েছেন। বাকি এক লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। গত অর্থ বছর আলমডাঙ্গায় সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে বিতরণের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এই টাকা গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করার কথা। কিন্তু কোনো টাকাই বিতরণ করেননি সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন।
কয়েক মাস আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমডাঙ্গা সফর করেন। ওই সময় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মচারীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা তোলেন সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন। প্রতিটি বেসরকারি এতিমখানা থেকে বরাদ্দের ৪ শতাংশ অর্থ তোলা হয় চাঁদা হিসাবে। এছাড়া এতিমখানা ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা অনুমোদনের নামে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওই এলাকায় পরিদর্শনে গেলে তার আপ্যায়নের জন্য কর্মচারীদের ভ্রমণ বিল থেকে ১০০ টাকা করে কাটা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, উপজেলার রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই। রোগী কল্যাণ সমিতির ওষুধ সরবরাহকারী দোকান থেকে নাজমুল হোসেন প্রয়োজনীয় ওষুধ নিচ্ছেন। বিল পরিশোধ করা হচ্ছে রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে। আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের জন্য সরকারিভাবে সরবরাহ করা ল্যাপটপ নাজমুল হোসেন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে অকেজো করে ফেলেছেন। অভিযোগের বিষয়ে আলমডাঙ্গা সমাজসেবা অফিসার মো. নাজমুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে করা। তদন্তে দোষী হলে শাস্তি হবে।
অপরদিকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা সমাজকল্যাণ সংগঠক মো. জিয়াবুল হোসেনের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন কর্মসূচির বয়স্ক ও বিশেষভাতার টাকা বিতরণ না করার অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। তিনি হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের অর্থ বিতরণ না করে কালক্ষেপণ করছেন। সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ সমাজসেবা অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে তাদের মধ্যেও ভালো অফিসার রয়েছে কিন্তু তাদের সংখ্যা কম।
এ জাতীয় আরো খবর..