সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩১ জন (২৪ জন বর্তমান ও ৭ জন সাবেক) শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার হওয়া সবার রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থেই আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে এবং দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী।
ইসলামী ছাত্রশিবির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবুল বাশার আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এখানে সংগঠনের সঙ্গে কারা কারা যুক্ত। তাঁরা আসলে বেড়াতেই হাওরে এসেছিলেন। পুলিশ হয়রানির জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।’
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে রোববার বিকেলে পুলিশের এই বিশেষ অভিযান নিয়ে এলাকায় নানা মহলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, হাওরে এই মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যসংখ্যক থাকেন শিক্ষার্থী।
আজ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান হয়েছে। নেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা। পরে তাঁদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ছাত্রশিবিরের বুয়েট শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক আফিফ আনোয়ারের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে এঁরা সবাই টাঙ্গুয়ার হাওরে এসেছিলেন। আফিফ বুয়েটের ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মান্দারখিল গ্রামে। আটকের পর পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে ৩৩টি মোবাইল ফোন, ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কাগজপত্র, সংগঠনের তহবিলসংক্রান্ত প্রচারপত্র, সংগঠনের সাথি ও সদস্যদের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণাসংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করেছে। পুলিশের দায়ের করা মামলার জব্দ তালিকায় এসবের উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন প্রথম বর্ষ, ছয়জন দ্বিতীয় বর্ষ, পাঁচজন তৃতীয় বর্ষ, পাঁচজন চতুর্থ বর্ষ এবং দুজন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে সাতজন বুয়েটের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন এবার এসএসসি পাস করেছেন, একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাসায় কাজ করেন।
রোববার ঢাকা থেকে এসে যে নৌকায় তাঁরা টাঙ্গুয়ার হাওরে যান, সেই নৌকার মালিক আহাদুল ইসলামের সঙ্গে আজ মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁর বাড়ি টাঙ্গুয়ার হাওরের রতনশ্রী গ্রামে। আহাদ বলেন, শনিবার রাতে তাহিরপুর বাজারের পরিচিত একজনের মাধ্যমে তাঁর নৌকা ভাড়া হয়। এক দিন ও এক রাতের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২৫ হাজার টাকা। রোববার সকাল ১০টার দিকে এই শিক্ষার্থীরা তাহিরপুর উপজেলা সদরে আসেন। এরপর তাঁরা খাওয়ার জন্য বাজারসদাই করেন। ঘাট থেকে হাওরের উদ্দেশে নৌকা ছাড়ে ১২টার দিকে। এরপর হাওরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এলাকায় গিয়ে যাত্রীরা গোসল ও খাওয়াদাওয়া করেন। পরে কিছু সময় নৌকার ভেতরে বিশ্রাম নেন তাঁরা। বিকেলে হাওরের উত্তরপারের সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট এলাকায় যাওয়ার পথে পাটলাই নদীতে দুটি স্পিডবোটে পুলিশ গিয়ে তাঁদের নৌকা থামায়। পরে সবাইকে থানায় নিয়ে আসে। তখন বেলা সাড়ে তিনটার মতো বাজে। পুলিশ একই সময়ে নৌকার মালিক আহাদুল ইসলামকেও থানায় নিয়ে আসে। আহাদুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই ছাত্র মানুষ। নৌকার ভেতরে তাঁরা কী করছেন, আমরা তো জানি না। পুলিশ আমারে ছাড়লেও নৌকা এখনো থানায় আছে।’
এ জাতীয় আরো খবর..