মোঃ নাজমুল হুদা,বান্দরবান দ. প্রতিনিধি:
বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আবু মুছা (৩২) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ৪ জানুয়ারি নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাবুপাড়া এলাকায় হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল আবছার মামুন (১৯) এবং তার বড় ভাই আবু মুছার মধ্যে জমি এবং তাদের মায়ের একটি গরু-বাছুর দেওয়া-নেওয়া নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়।
তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি ও পরে মারামারিতে রূপ নেয়। এ সময় আবু মুছা তার ছোট ভাই মামুনকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন এবং তার বাম কানে কামড় দিয়ে কানের নিম্নাংশ ছিঁড়ে ফেলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই মামুন মারা যান বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
নিহতের মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে আলীকদম থানায় ৪ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার দ্রুত আসামি গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. হারুন রশিদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। তদন্ত দল একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে (৮ জানুয়ারি ২০২৫) লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঠান্ডাঝিরি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে আসামি আবু মুছাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ জানায়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান আসামি গ্রেফতারের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
হত্যার কান্ডের পটভূমিঃ
স্থানীয় সূত্র জানায়, মামুন ও তার সৎভাই আবু মুছার মধ্যে জায়গাজমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি তাদের মায়ের একটি গরুর বাছুর আবু মুছার ছেলেকে উপহার দেওয়ার প্রস্তাবে মামুনের আপত্তি উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শী জয়নাল আবেদিন জানান, বাছুরটি মামুনের মালিকানাধীন ছিল। এ নিয়ে শুরু হওয়া তর্কাতর্কি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। হাতাহাতির সময় আবু মুছা মামুনের কানে কামড়ে তা ছিঁড়ে ফেলে। পরবর্তীতে আবু মুছা কাঠের লাঠি দিয়ে মামুনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন।
আহত অবস্থায় মামুনকে আলীকদম সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন। তবে পথিমধ্যে মামুনের মৃত্যু হয়।
নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছিল, পুলিশ দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেফতার করায় এলাকায় শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে ”
স্থানীয় পাড়ার সরদার মো. নুরুল বশর বলেন, “এক মা ও দুই বাবার সন্তান হওয়ায় মামুন ও আবু মুছার মধ্যে পারিবারিক বিরোধ লেগেই থাকত। জায়গাজমি নিয়েও তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। তবে হত্যার উদ্যেশে মারামারি হয়নি, এটি হঠাৎ ঘটে গেছে। ”
পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..