কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
ভূরুঙ্গামারীর হাটেরকুটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের আরফিনা আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে আইকুমারীভাতি গ্রামের সুমন মিয়ার বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে শশুড় বিএনপি নেতা নান্নু মিয়া তার পুত্রবধু আরফিনাকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ ভূয়া এভিডেভিট ও ভূয়া রেজিস্টারের মাধ্যমে একক তালাকের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ ও ভূক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝার ইউনিয়নের হাটেরকুটি গ্রামের হতদরিদ্র খবির উদ্দিন ও ফজিলা বেগমের তিন কন্যার মধ্যে ২য় কন্যা আরফিনা আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে জয়মনিরহাট ইউনিয়নের আইকুমারীভাতি গ্রামের বিএনপি নেতা নান্নু মিয়া ও সুফিয়া বেগমের পুত্র সুমন মিয়ার সাথে গত ১২সেপ্টেম্বর ২৩সালে ১লাখ ৪০হাজার টাকা দেনমোহরে বিবাহ হয় ও খবির উদ্দিন যৌতুক বাবদ নগত সুমনের বাবা নান্নু মিয়াকে ১লাখ ৩হাজার টাকা দেয় এবং আসবাবপত্র দেয়। আরফিনা ও সুমনের সংসার ভালোই চলছিলো। বিয়ের ৩মাসের মধ্যে পুত্রবধুর লোভে দিশেহারা হয়ে শশুড় নান্নু মিয়া আরফিনাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন এবং গত ২৫নভেম্বর ২৩সালে পুত্রবধু কু-প্রস্তাব অস্বীকার করায় স্বামী শশুড় মিলে আরফিনাকে বিনাদোষে বেদম মারধর করে তার বাবার বাড়িতে রেখে যান। সে সময় আরফিনার হতদরিদ্র বাবা ও মা দুজন ঢাকায় কাজ করতেন আর এই সুযোগে আজমাতা কম্পেরহাট এলাকার বাবলু দেওয়ানি ও জয়মনিরহাট ক্লাব মোড়ের বিয়ের বিখ্যাত জাল ঘটক জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে বিএনপি নেতা নান্নু মিয়া তার কন্যা নিলুফা বেগমকে নাটকিয়ভাবে পুত্রবধুকে আরফিনা আক্তার সাজিয়ে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে গত ৭ডিসেম্বর ২৩সালে এডভোকেট মানিক চন্দ্র বর্মনের মাধ্যমে ১৭৪৬/২৩এভিডেভিটে একক ভূয়া তালাক দেয় এবং সেদিনই নান্নু মিয়া তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমকে আরফিনার মা ফজিলা বেগম সাজিয়ে জাল স্বাক্ষরে নাগেশ^রীর ভিতরবন্দ ইউপি নিকাহ রেজিস্টার হাবিবুর রহমানের সাথে যোগসাজস করে একক ভূয়া তালাক নেয়। বিএনপি নেতা নান্নু মিয়ার এ গল্প যেনো সিনেমাকেও হার মানায়। আরফিনার পিতা দিশেহারা হয়ে জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও বিচার থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে বিএনপি নেতা নান্নু মিয়া তার পুত্র সুমনকে নাখারগঞ্জ এলাকায় বিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের যৌতুক হাতিয়ে নিয়েছেন। নান্নু মিয়া ও তার দলবল হতদরিদ্র খবির উদ্দিন ও তার পরিবারকে মামলা না করাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
হাটেরকুটি গ্রামের বাচ্চু মিয়া, সাদ্দাম হোসেন ও আব্দুল্লাহসহ অনেকে বলেন, হতদরিদ্র খবির উদ্দিনের কন্যা আরফিনা আক্তারের সাথে আইকুমারীভাতি গ্রামের বিএনপি নেতা নান্নু মিয়ার পুত্র সুমন মিয়ার সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের সময় খবির উদ্দিন তার শ্রমবিক্রির টাকা যৌতুক বাবদ সুমনের বাবাকে ১লাখ ৩হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র দেয়। বিএনপি নেতা নান্নু মিয়ার চরিত্র জঘন্য।
নান্নু মিয়া ও বাবলু দেওয়ানির সঙ্গে ফোনে কথা হলে স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া এভিডেভিট এবং সাজানো তালাকনামার কথা স্বীকার করে বলেন, জোর যার মুল্লুক তার, টাকা হলে আইকেও কেনা যায়। নিউজ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেন।
নাগেশ^রী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউপি নিকাহ রেজিস্টার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা হলে নান্নুর স্ত্রীর জাল স্বাক্ষরে তালাকনামার কথা স্বীকার করে বলেন, যা হবার হয়েছে। মেয়ের বাবা আমাকে ৫শত টাকা দিয়েছে বাকি ৪হাজার ৫শত টাকা দিলে আমি একটি কাগজ দিবো আর কিছুই হবেনা।
ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, এটি একটি বড় প্রতারণা। ব্র্যাকের মাধ্যমে মামলা করলে ভালো হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা রেজিস্টার মোস্তাফিজ আহম্মেদ জানান, এটাতো সিনেমার চেয়েও বড় কাহিনি। ভিতরবন্দ ইউপি নিকাহ রেজিস্টার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..