আদমদিঘী (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়া জেলার আদমদীঘির সাঁওইল হাটবাজারে শীতবস্ত্র বেচাকেনা জমতে শুরু হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে থেকে সাঁওইল বাজারে শীতবস্ত্রের বাজার জমজমাট হলেও এবছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে শীতবস্ত্র চাদর ও কম্বল বেচাকেনার হাটবাজার। শীত যত ঘনিয়ে আসায় সাঁওইলের কারিগররা কম্বল চাদরসহ শীতবস্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। এখন অধিকাংশ তাঁত মেশিন যান্ত্রিক সুবিধার কারনে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে চালাতে হয়না কারিগরদের। কিছু কিছু বাড়িতে হাত ও পা চালিত মেশিন দ্বারা শীতবস্ত্র তৈরী করা হলেও অধিকাংশ বাড়িতে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে এখানকার তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান। আদমদীঘি উপজেলা সদর হতে মুরইল বাজার ৪ কিলোমিটার, সেখান থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে নসরতপুর ইউনিয়নের তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত সাঁওইল হাটবাজার। সাঁওইলে সপ্তাহের প্রতি বুধবার ও রোববার বিশাল আকারে শীতবস্ত্রের হাট বসে। এই তাঁত শিল্পকে ঘিরে সাঁওইলসহ, নিমাইদিঘী, ছাতিয়ান গ্রাম, কেশরতা, বিনাহালী, মঙ্গলপুর, মুরইল, পুশিন্দা, দেলুঞ্জ, মুরাদপুর, ছাতনিসহ বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার বিশাল এলাকা জুড়ে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির ডামাডোলে সুতা ও রংসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারনে তৈরী শীতবস্ত্র বিক্রি করে এখন আর তেমন লাভবান হচ্ছেনা তাঁতীরা। তাই অনেক ক্ষুদ্র তাঁত শিল্পী এই পেশা কোন রকমে ধরে রেখেছে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এই তাঁতী গোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছেন বাপ দাদার পেশা তাঁত শিল্প। এই শিল্পকে ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া প্রয়োজন বলে তাঁত, সুতা ও কম্বল চাদর ব্যবসায়ী এবং শাঁওইল বাজার কমিটির সেক্রেটারী মাহফুজার রহমানসহ অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানান, সুতাসহ কাঁচা মালের দাম এবং শ্রমিক মজুরি বেশির কারণে এবার তৈরী কম্বল চাদরের দাম কিছুটা বেশি। তবে বেচাকেনা শুরু হলেও পাইকারদের আগমন তেমনটা জমে উঠেনি। শীত বাড়লে পাইকার আসতে শুরু করলে পুরোদমে বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। সাঁওইল গ্রামে অনেক আগে থেকেই তাঁতী শ্রেণির মানুষের বসবাস। যার কারনে শাঁওইল গ্রামে স্বাধীনতার আগে থেকেই এক ভিন্নধর্মী হাটবাজার গড়ে উঠে। যার মূলে রয়েছে শীতের চাদর কম্বল গামছা ও উলের (উলেন) সুতা। এখানকার তৈরী উলেন চাদর কম্বলসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
বুধবার ও রোববার যখন সাঁওইলের হাট বসে তখন মনে হয় যেন মেলা বসেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীসহ সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চাদর কম্বল ও উলেন সুতা কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে যান। এ পেশায় ৩০ হাজারের অধিক পরিবার সাবলম্বী হয়েছে। সাঁওইল হাটবাজারে ছোট বড় মিলে প্রায় সহস্রাধিক দোকান রয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..