- প্রকাশিত : ২০২৫-০২-০৬
- ৪৩ বার পঠিত
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শস্য ভান্ডার খ্যাত ভারত-বাংলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশীয় জেলা শেরপুরের ৩টি উপজেলা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাকি ২ উপজেলায় আংশিক ক্ষতি সাধন হয়। এরমধ্যে নকলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে কৃষকের সব ফসল সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়ে যায় এবং বাকি ৫টি ইউনিয়নের কৃষকের ফসল আংশিক নষ্ট হয়ে যায়।
পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট ওই বন্যার ক্ষতি পোষিয়ে নিতে কৃষকরা বোরো ধান রোপনের কাজে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ কৃষক আগাম সরিষা আবাদ করেন। পাশাপাশি নি¤œ এলাকায় বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করেন তারা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আগাম সরিষা তুলে ওইসব জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে উপজেলায় বোরো ধান রোপনের উপযোগী প্রায় ৫৫ ভাগ জমিতে বোরো ধান লাগানো শেষ হয়েছে। এখন বোরো ধানের চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হওয়ায় কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো ধান লাগাচ্ছেন।
মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারনে অন্যান্য জেলা-উপজেলা থেকে বরাবরের ন্যায় কৃষি শ্রমিক নকলাতে না আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে বেশি মজুরিতে চাহিদা মিটাতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলশ্রæতিতে এলাকা ভিত্তিক বর্তমানে কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা।
বোরো ধান রোপনের শ্রমিক আলমাছ আলী, রোকন মিয়া, আলকাছ মিয়া ও মিনহাজ আলীসহ অনেকেই জানান, এই মৌসুমে বোরো ধান রোপন ছাড়া অন্য কোন কাজ না থাকায় তাদের বাড়তি আয়ের উৎস নেই। ফলে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কয়েক দিন ধরে শীতকে উপক্ষো করে বোরো ধান লাগানোর কাজ করছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবং অন্য মৌসুমের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে শ্রমিক মজুরি বেশি থাকায় তারা খুশি।
উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভ‚রদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক জানান, কয়েক দিনরে মধ্যেই তাদের সংগঠনের সকল সদস্যের বোরো ধান রোপনের কাজ শেষ হবে। তবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হলে এবং সিন্ডিকেট করে সারের দাম না বাড়ালে তথা বর্তমানের মতো সার্বিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে কৃষকরা তাদের কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে সারের দাম বাড়াতে না পারে এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হয়, সেদিকে প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সুদৃষ্টি রাখার আহবান জানান বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটে ও ভিন্ন ভিন্ন নামে হাইব্রিড জাত যেমন- এসআর, তেজ গোল্ড, এসিআই, জনক রাজ, রুপসী বাংলা, সোনার বাংলা, কৃষিবিদ, হীরা, ব্যাবিলন, বালিয়া, ইস্পাহানী, ময়না, টিয়া, যুবরাজ, মহারাজ, ধানিগোল্ড, গোরমোটা, রাইচার, সম্পদ এবং উফশী জাতের ধানের মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে ব্রি ধান-২৮, ২৯, ৫৮, ৬৭, ৬৯, ৭৪ ও ৮৯, নেরিকা মিউট্যান্ট এবং বিআর-২৬ জাতের ধানসহ অন্তত ৫০টি হাইব্রিড জাতের উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধানের চারা রোপন করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, চলতি বোরো মৌসুমের জন্য ১২,৪২৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাত ৯,৮১০ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ২,৬১৫ হেক্টর। বোরো আবাদের জন্য ৬৮৫ হেক্টর জমিতে বীজ তলা করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৪০ হেক্টর ও উফসী জাতের ধানের বীজ তলা করা হয়েছে ৫৪০ হেক্টর জমিতে। এই মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৬,৩০০ কৃষককে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার ও হাইব্রিড জাতের বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, নকলায় উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের আবাদ করা হলেও এরজন্য কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। তাছাড়া পুনর্বাসন কর্মর্সূচির আওতায় কোন কৃষককে সহায়তা প্রদান করা হয়নি। নকলা উপজেলায় স্থানীয় জাতের বোরো ধানের আবাদ করা হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ী ঢলের কারনে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় জমিতে প্রচুর পলি পড়েছে। ফলে এবছর ফলন ভালো হবে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় না পড়লে এই উপজেলার উৎপাদিক বোরো ধান দিয়ে নিজেদের খাদ্য চাহিদা মিটানোর পরে বাড়তি ধান বা চাল বরাবরের ন্যায় অন্যান্য জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা যাবে।’ বোরো আবাদের উপযোগী উপজেলার সব জমিকে চাষের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আগামীতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা, অর্জন ও উৎপাদন বাড়বে বলে আশাব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..