রাশিমুল হক রিমন
প্রতি বছর শীত এলে অভাবীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা উচ্চারিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ব্যতিক্রম যেটা হয়েছে, সেটা সাধারণভাবে চোখে পড়ার মতো নয়। ব্যতিক্রমটি হলো, প্রতি বছর সমাজের সামর্থ্যবান জনদরদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। তরুণ যুবকরা মহল্লায় মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে। শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকাণ্ড। এবার সেই উৎসাহ—উদ্দীপনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
সারাদেশ কাঁপছে তীব্র শীতে। বরগুনাতে লেগেছে হিমশীতল পরশ। শীত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পোশাকের দোকানগুলোতে বেড়েছে গরম পোশাকের বিক্রি। চাহিদা বেশি থাকায় মার্কেটের দোকানে শীতের কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ফুটপাতের দোকানগুলোর দিকে ঝুঁকলে সেখানেও তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। ফুটপাতে শীতবস্ত্রের মেলা বসলেও দামে আগুন। আগের চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে শীতের কাপড়।
গতকাল (শনিবার) আমতলী শহরের সদর রোডের পোশাকের দোকান, মেয়র মার্কেট, সাকিব প্লাজাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। দোকানগুলোতে শিশু—বয়স্কদের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাত মোজা, মাফলার, সোয়েটার, ফুলহাতা গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে বেশি। কাপড়ের মান ও আকারভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
ফুটপাতে ভিড় করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা জানান , শীতের শুরুতে ভারী ও গরম পোশাক প্রয়োজন পড়েনি। তবে এখন আগের কাপড়ে আর কুলাচ্ছে না।কয়েকদিন যাবত শীত বেড়ে যাওয়ায় কম দামে পোশাক কিনতে আইছি। এখানেও শান্তি নাই। গরিবের চাইতে টাকা পয়সা ওয়ালা লোকেরাই ভিড় করে বেশি। গরিবের মার্কেটে বড়লোক কেন?
থ্রি হুইলার চালক আলালউদ্দিন বলেন, শীতের শুরুতে পোশাক কিনতে পারিনি । কিন্তু শীত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।শীতের পোশাক কিনতে হচ্ছে। মার্কেটে কাপড়ের দাম অনেক বেশি। এ কারণে তিনি ফুটপাতে এসেছেন। কিন্তু ফুটপাতেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, দোকানে দোকানে অনেক ভিড়। এ সুযোগে বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগের দামের থেকে এখন প্রতি কাপড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা ইউনুস আলী বলেন, তিনি ছোট চায়ের দোকান চালান। অল্প আয়। তাই বেশি দামে বড় দোকান থেকে কাপড় কিনতে পারেন না। ফুটপাতেই ভরসা। শীত নিবারণে মোটা কাপড় কিনবেন। কিন্তু সেখানেও দেখছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি দাম।ধনীরাই কিনছে বেশি।
পোশাকের দাম বাড়ায় বিষয়টি স্বীকার করেছেন ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী। তারা জানান, কয়েক দিনের ঠান্ডার জেরে পোশাকের দাম বেড়েছে। ফুটপাতে শীতের কাপড়ের ব্যবসা করেন বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, এ সপ্তাহে ক্রেতা বেশি। বিক্রিও ভালো। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা আসছেন। তাই দামও সামান্য বেড়েছে।
শীতার্ত মানুষের দিকে সহানুভূতি ও দয়ার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সামর্থ্যবানদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। শীত আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়নোর এ সুযোগকে লুফে নেওয়া উচিত। কেননা অন্যের কষ্ট লাঘব করলে নিজের লাভই বেশি। এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
নবীজী ইরশাদ করেন, কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরা তার কাছে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি : ২৪৮৪)
অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে এ বিষয়ে বলা আছে । এসো প্রভূর সেবক হই, গরীব ও অভাবীদের দান করি । (ঋগবেদ — ১.১৫.৮)
আমরা যখন সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করি, তখন ঈশ্বর আমাদের উপাসনা গ্রহণ করেন।
(যাকোব — ১:২৭)
সকল ধর্মেই তাদের স্বজাতিকে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..