সাগর হোসাইন, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর পত্নীতলায় একটি ভাটা থেকে জোর করে ইট নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ এস.আর.বি. ব্রিকস্ এর স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ওই ইটভাটা থেকে বিনা বাধায় ইট নিয়ে যাচ্ছে রফিকুল নামের বিএনপির ওই নেতা। শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের বৈশকূল এলাকায় অবস্থিত এস.আর.বি ব্রিকস্ এ ঘটনাটি ঘটে। ভূক্তভোগী শহিদুল ইসলাম (৫৮) ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামীলীগের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর অভিযোগ ওঠা রফিকুল (৫০) কান্তা গ্রামের মৃত রহমানের ছেলে। এবং তিনি আমাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং একই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর রাতে এস আর বি ব্রিকস্ এর প্রোপাইটার এবং কুন্দন গ্রামের মৃত হুজুর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম, দুই ভাই রহিদুল ইসলাম ও গফুর ইসলাম এবং শহিদুলের ছেলে মামুন হোসেনকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে রফিকুল নামের বিএনপির ওই নেতা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভটভটি ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছিল। আর অসহায়ের মতো দেখছে পরিবারের লোকজন এবং শ্যালক মশিউর রহমান নয়ন। তবে রফিকুলের দাবি ইট ভাটাটি তার কাছে বিক্রি করায় তিনি ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।
মশিউর রহমান নয়ন বলেন, গফুর ইসলাম আমার ভগ্নিপতি। তার ভাই চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম এস.আর.বি ব্রিকস্ এর প্রোপাইটার। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে পুলিশ এসে শহিদুল ইসলাম ও ভগ্নিপতিসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি সাবেক মেম্বার রফিকুলের ২০১৯ সালের করা মিথ্যে মামলায় ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। রফিকুল একসময় শহিদুলের সাথে পার্টনারে ব্যবসা করতো। এরপর রফিকুল তার অংশ বিক্রি করে দেয়। কিন্তু ৫আগষ্টের পর সে পুরো ইটভাটা দখলের পাঁয়তারা করতে থাকে। এরপর গত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের অনুপস্থিতিতে ভটভটি ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ এসেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জোর করে ক্ষমতার দাপট দেখে ইট নিয়ে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে। সে এই ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করছে। তাই আমরা ধারণা করছি ক্ষমতা দেখিয়ে ইটভাটাটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। আমরা সুষ্ঠ বিচারের আশায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি করছি।
বিকেল সোয়া তিনটার দিকে জানতে চাইলে আমাইড় ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে রফিকুল মুঠোফোনে বলেন, ওভাই আমার ভাটা এটা। শহিদুল চেয়ারম্যান আমার কাছে ২-৩ মাস আগে ডিড করে এফিডেফিট করে দিয়েছে। আওয়ামীলীগের আমলে সে আমার সাথে জালিয়াতি করেছিল। পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে স্ট্যাম্প করে নিয়েছিল। কিন্তু শহিদুল আপোষে আমার কাছে ৬০লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে এই ইটভাটা। তাই আমি ইট নিয়ে যাচ্ছি। তবে একসময় তার অংশ বিক্রি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আওয়ামীলীগের সময় শহিদুল আপনার কাছ থেকে জোর করে নিয়েছে, এখন আপনি সেই রকম করছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এরকম কিছু না ভাই। আমি সেরকম মানুষ না। আপনি প্রয়োজনবোধে ভাটায় আসেন। আর পুলিশ তাকে নিষেধ করেনি বলে তিনি অস্বীকার করেন।
রফিকুল আমাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্বীকার করে বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আক্কাস আলী মুঠোফোনে বলেন, আমি তার অভিযোগের বিষয়টি সম্পর্কে আগে খোঁজ নিবো, তারপর করণীয় কি সেটা জানাবো।
জানতে চাইলে পত্নীতলা থানার এস আই মৌসুম মুঠোফোনে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলকে ইট নিয়ে যেতে নিষেধ করেছি। মালিকানা নিয়ে সমস্যা থাকলে সেটা বসে মিটমাট করার জন্য বলা হয়েছে। এবং আর সমস্যা হবে না বলে রফিকুল আমাকে বলেছে।
পত্নীতলা থানার ওসি (তদন্ত) আবু তালেব মুঠোফোনে বলেন, ২০১৯ সালের ৪২৭ ধারায় গাছপালা কাটার একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছিল। সেই মোতাবেক তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে ইট যাতে নিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য একজন অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল। এরপরও বিষয়টি দেখছি বলে জানান থানার এই কর্মকর্তা।
এ জাতীয় আরো খবর..