ইব্রাহিম মুকুট, ময়মনসিংহ:
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, সংস্কৃতি সর্বদাই পরিবর্তনশীল। এটা একেক সময় একেক রূপে দেখা যায়। আর্টফিল্ম বা সকল ধরনের চলচ্চিত্র যাই বলি না কেন, এটি সংস্কৃতির আরো একটি নতুন রূপ। এটাও সবসময় পরিবর্তনীয়।
উপদেষ্টা গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব অথারাইজ সিনেমাস (আইসিসিএই) এর সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব ফিল্ম & মিডিয়া( আইএএফএম)এর উদ্যােগে আয়োজিত "9th edition of the European Arthouse Cinema Day" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহের এ আয়োজন এই উপমহাদেশে ইউরোপিয়ান অথারাইজ সিনেমা ডে এর প্রথম আয়োজন। প্রধান অতিথি বলেন, মানবজাতি যা কিছু সৃষ্টি করেছে সবকিছুই কালচার। হতে পারে সেটা কোনো দৃশ্যমান বস্তু, কোনো প্রথা কিংবা মানবিক বিশ্বাস। বৃহৎ পরিসরে বলা যায়, প্রকৃতি প্রদত্ত মানুষ যেটা নিজের সাথে মানিয়ে নিয়েছে বা পেয়েছে, সেটাও সংস্কৃতি। ঐ সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করা হচ্ছে শিক্ষা। সংস্কৃতির একটি ঐতিহাসিক জায়গা বৃহত্তর ময়মনসিংহ। এই উপমহাদেশের মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের মতো আমাদের দেশের অনেক সাংস্কৃতিক গুণীমানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির উচ্চতায় ফ্রান্স বিশ্বের দরবারে অনেক এগিয়ে। ফরাসি বিপ্লব, ঐতিহাসিক আন্দোলন, এসব পৃথিবীর বুকে স্মরণীয়। আমাদের সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র ফ্রান্সসহ বিশ্বের দোয়ারে পরিচিতি লাভ করলে এটা আমাদের জন্য পরম পাওয়া ও আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ইউনেস্কো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ চলচ্চিত্রের সেই জায়গাগুলোতে বাংলাদেশের আর্টফিল্মকে তুলে ধরা নিঃসন্দেহে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আরো একটি ধাপ। সংস্কৃতির বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সংস্কৃতির পরিমাপক, সংরক্ষক ইউনেস্কোর প্রশংসনীয় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের হেড অব অফিস এন্ড ইউনেস্কো কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভকে অভিনন্দন জানান উপদেষ্টা।
আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকে উপদেষ্টা আরো বলেন, এ বিষয়ে আমরা সাধারণ মানুষ কী করতে পারি, নিজেদের কী দায়িত্ব রয়েছে, যারা এখানে সমবেত হয়েছি তাদের ভূমিকা কী হতে পারে, সেটাও নিজেদেরকেই ভাবতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রমকে আমরা একজন দর্শক ও বার্তাবাহক হিসেবেও উৎসাহ দিতে পারি। চলচ্চিত্র তৈরি করার এ ধরনের গঠনমূলক আলোচনা ও অনুষ্ঠান সবাইকে সমৃদ্ধ করবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন আর্টফিল্মকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে প্রচেষ্টা চলমান রাখবে।
বিভাগীয় কমিশনার মো: মোখতার আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্স রাষ্ট্রদূত মিঃ মেরী মাছদুপিও (Ms. Marie Masdupuy,) ইউনেস্কোর বাংলাদেশের হেড অব অফিস ও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডাঃ সুসান ভিজে ( Dr. Susan Vize,) রেঞ্জ ডিআইজি ড. মোঃ আশরাফুর রহমান, কালচারাল অ্যাক্টিভিস্ট ও রাইটার ডাঃ প্রদীপ চন্দ্র কর সহ আরো গণ্যমান্য ব্যক্তি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন (আইএএফএম) এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বিবেশ রায় ছাড়াও কালচারাল এক্টিভিস্ট আব্দুর রব মোশারফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির আহবায়ক মোঃ আল আমিন রাকিব (তনয়), ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজুল আলম মাসুমসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যম ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
মহুয়া, মলুয়া, ময়মনসিংহ গীতিকাসহ নানান উৎসের অঞ্চল এই বৃহত্তর ময়মনসিংহ। সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এ জায়গাটিতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। চলচ্চিত্র গণতন্ত্রের একটি বড় ফোকাস ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বের একেক দেশের সাংস্কৃতিক চর্চা বোঝা যায়। নতুন প্রজন্মের জন্য সিনেমাকে আমাদের সামাজিকভাবে কাজে লাগানো উচিত বলে মন্তব্য করেন বিশেষ অতিথির বক্তাতারা।
এ জাতীয় আরো খবর..