মোঃ রাফসান জানি, স্টাফ রিপোর্টার (ভোলা)
ভোলা সদর হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে জর্জরিত,২০ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা স্থল থাকলেও ভোলা সদর হাসপাতাল এসে পাচ্ছেন না কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১১ বছর আগে। তবে সেবাকার্যক্রম চলছে আগের সেই ১০০ শয্যার লোকবল দিয়েই। শুধু তাই নয়, এই ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে যে পরিমাণ জনবল দরকার তাও নেই এখানে। এতে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে দ্রুত জনবল নিয়োগসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষসহ ভোলাবাসী।
সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বলেছেন, সারাদিনে মাত্র একবার চিকিৎসকের দেখা মেলে। দুপুরের পর হাসপাতালে কোনও রোগী ভর্তি হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছাড়া পরের দিন সকালের আগে ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলে না। কোনও পরীক্ষা দিলে তার রিপোর্ট দেখাতে হয় পরের দিন। ফলে চিকিৎসা পেতে অনেক রোগীকে ভর্তির পর ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ওয়ার্ডের শয্যা সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শৌচাগার নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন রোগীরা।
হাসপাতালে চিকিৎসক প্রয়োজন ৬০ জন, সব মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক।হাসপাতালে নার্স প্রয়োজন ৯০ জন, সেখানে নার্স রয়েছে ৫৪ জন। ২৫০ শয্যা ভোলা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ পদেই চিকিৎসক নেই দীর্ঘবছর ধরে। সিনিয়র কনসালট্যান্ট ( সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোসার্জারি) , জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), প্যাথলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার (রক্তসঞ্চালন), অ্যানেসথেসিস্ট, অর্থোপেডিক চক্ষু সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো চিকিৎসক না থাকায় অসহায় দুস্থ রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। চিকিৎসক সংকট দেখিয়ে তাদের কে বিভাগীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জানা গেছে, ভোলা সদর হাসপাতাল টি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। এর পরে দুই যুগের বেশি সময়ের পরে ২০২৩ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। শয্যায় উন্নতি হলেও সেবায় উন্নতি করতে পারেনি হাসপাতালটি। সংকটে সংকটে কাটছে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ছুটে যাচ্ছে ক্লিনিকে আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সিনিয়র কনসালটেন্টের অভাবে জটিল রোগের রোগীরা কোন উন্নত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে অন্যত্র।এ সুযোগে শহরের হাসপাতাল এবং আশ পাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধ শত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার আর ক্লিনিক।হাসপাতালে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্র । হাসপাতালে অযত্ন আর টেকনিশিয়ানের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
এ বিষয় তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফী কাছে জানতে চাইলে ,আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন বার বার লোকবল বাড়ানোর চাহিদাপত্র পাঠালেও কোনো ফল হয়নি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।
এ জাতীয় আরো খবর..